খাদ্য এবং পুষ্টি হল মানবদেহের জন্য জ্বালানী দ্রব্যের সমতুল্য, যা আমাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। প্রতিদিন সঠিক খাদ্য গ্রহণ এবং সুষম পুষ্টির কার্যকর ব্যবস্থাপনা সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে আছে স্নেহ, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পানি। পুষ্টি এবং খাদ্যের সঠিক সমন্বয় দেহের গঠন ও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা, রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, প্রতিদিনের শক্তি যোগায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও সহায়তা করে। স্বাস্থ্য অনেকাংশে পুষ্টির উপর নির্ভর করে এবং পুষ্টি খাদ্য গ্রহণের উপর নির্ভর করে। এই অধ্যায়ে আমরা শিখবো কেন খাদ্য অপরিহার্য ও এর প্রয়োজনীয়তা, পুষ্টি কি, পুষ্টির উৎস ও তাদের কার্যাবলি এবং মানবদেহের ভিন্নতা অনুযায়ী খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয় পরিমাণ। জারও জানবো খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য পরিকল্পনা মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
উল্লেখিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে এই অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন আইটেমের জব (কাজ) সম্পন্ন করব। এই জবের মাধ্যমে আমরা খাদ্যগ্রহণের আদর্শ অবস্থান, খাদ্য নিরাপত্তার নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে খাদ্য প্রস্তুত, খাদ্য তৈরির সময় স্বাস্থ্যবিধি খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি নিরূপন করতে পারব। জবগুলো সম্পন্ন করার পূর্বে প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ জানব।
খাদ্য হল তরল, অর্ধতরল বা কঠিন যেকোনো কিছু, যা পুষ্টি এবং শক্তি ধারণ করে এবং যা খাওয়া হলে শরীরে পুষ্টি যোগায়। খাদ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ রয়েছে যা চলাফেরা, চিন্তাশক্তি, দৈনন্দিন জীবনের কাজ ও আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ অব্যাহত রাখতে, আমাদের সুস্থ রাখতে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যখন আমরা খাদ্য গ্রহণ করি, তখন আমাদের শরীরে রক্তে দরকারী পুষ্টি শোষণ করে এবং সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংরক্ষণ করে। সুতরাং, যে কোনো দ্রব্যকে খাদ্য বলতে হলে তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, তা হলো খাওয়ার যোগ্য হতে হবে এবং তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে।
খাদ্যের গ্রুপ, উৎস এবং কাজ অনুসারে খাদ্যকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। নিম্নের সারণী থেকে আমরা খাদ্যের বিভিন্ন ধরনের শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে জানব।
সুষম খাদ্যতালিকা হল এমন তালিকা যেখানে শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পানি এবং আশজাতীয় খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সঠিক অনুপাতে অন্তর্ভুক্ত করে সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকবে। সুষম খাদ্য ফল, যেই খাদ্যে সকল পুষ্টি উপাদান থাকে তা যেমন: দুধ। এই জাতীয় খাদ্য সুস্বাস্থ্যের প্রচার ও সংরক্ষণে সহায়তা করে। সুষম খাদ্য একজন ব্যক্তির জন্য রিকমেন্ডেড ডায়াটারী অ্যালাওএল ( Recommended Dietary Allowances - RDA) পুরু করে। RDA হন, সুস্বাস্থ্য বজার রাখার জন্য প্রয়োজনীয় হিসাবে বিবেচিত প্রতিদিন পুষ্টির (বা ক্যালোরি) আনুমানিক পরিমাণ। নতুন জ্ঞান প্রতিফলিত করার জন্য RDA পর্যায়ক্রনে আপডেট করা হয়।
সুষম খাদ্যের উপকারিতা
পুষ্টি বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায়, যখন আমরা যা খাই তা শরীরের সমস্ত শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করার জন্য প্রস্তাবিত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। এটি মানুষের বয়স, শরীরবৃত্তীয় অবস্থা, শারীরিক কার্যকলাপের সক্ষমতা এবং লিঙ্গের উপর নির্ভর করে। আমাদের জীবনচক্রে প্রাক-গর্ভধারণ, গর্ভধারণ, গর্ভাবস্থা, শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন, সর্বদা পুষ্টিকর খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাদ্য একজন ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনশীল করে তোলে এবং জীবনের মান উন্নত করে।
ভালো পুষ্টি মানেঃ
পুষ্টি উপাদান (Nutrients): পুষ্টি উপাদান হল খাবারে থাকা পদার্থ যা শরীরকে পুষ্ট করে। সাধারণ স্বাস্থ্য এবং শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার জন্য এগুলো প্রয়োজন, উদাহরণস্বরূপ: শক্তি সরবরাহ করা, শরীরের গঠন তৈরি করা, শরীরকে উষ্ণ রাখা, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা, যা বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।
প্রকারভেদ (Classification): খাদ্যের পুষ্টি উপাদানকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস এবং পানি।
১) মাক্রোনিউট্রিয়েন্ট (Macronutrients)
এগুলো বেশি পরিমাণে প্রয়োজন:
ক. কার্বোহাইডেট/শর্করা
খ. প্রোটিন/ আমিষ
গ. লিপিড/স্নেহ/তেল
ক. কার্বোহাইড্রেট/শর্করা (Carbohydrates): কার্বোহাইড্রেট শর্করা শক্তির প্রাথমিক উৎস। এর মধ্যে রয়েছে স্টার্ট, ফাইবার/ আঁশযুক্ত খাবার এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার। মিষ্টি খাবার যেমন চিনি, জ্যান, কেক এবং চিনিযুক্ত পানীয়গুলো কার্বোহাইড্রেটের উৎস, তৰে এগুলো ন্যূনতমভাবে খাওয়া উচিত। কারণ এগুলো অন্য কোনোও পুষ্টি সরবরাহ করে না এবং অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি বাড়ায়।
(i) উপলব্ধ কার্বোহাইড্রেট(Available Carbohydrates): শর্করা স্টার্ট হিসাবে প্রচুর পরিমাণে শস্য, শিম, ভাল এবং আলুতে উপস্থিত থাকে। এগুলো চিনি, গুড়, ফল, মধু এবং দুধে সাধারণ কার্বোহাইড্রেট হিসাবে উপস্থিত থাকে। স্টার্চ এবং শর্করা সহজে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি যোগায়।
(ii) অনুপলব্ধ কার্বোহাইড্রেট বা আঁশজাতীয় শর্করা (Unavailable Carbohydrates / Dietary fibers): এগুলো সেলুলোজ এবং হেমিসেলুলোজ আকারে উপস্থিত থাকে যা আমাদের শরীরে হজম হয় না। আঁশজাতীয় শর্করা শরীরের তৃপ্তির অনুভূতি বাড়িয়ে অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধ করে। আঁশজাতীয় শর্করা সমৃদ্ধ খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করে। আঁশজাতীয় শর্করা শরীরের চিনি এবং কোলেস্টেরলের শোষণকে ধীর করে দিতে পারে, যা শরীরকে হার্ট ডিজিস বা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে। আঁশজাতীয় শর্করা প্রধান উৎস হল সম্পূর্ণ শস্য, উদাহরণস্বরূপ: ওটস, ভুসি ইত্যাদি সবজি, উদাহরণস্বরূপ: বাধাকপি, কুমড়া পাতা ইত্যাদি, মটরশুটি, মটর ইত্যাদি এবং আম, কমলা এবং আনারসের মতো ফল ।
> কার্বোহাইড্রেটের কাজ :
**১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ৪ কিলোক্যালরি শক্তি দেয়।
> কার্বোহাইড্রেটের খাদ্য উৎস:
> শরীরে কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা: শরীরে কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা কার্বোহাইড্রেটের বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক কার্যকলাপের সক্ষমতা এবং শরীরবৃত্তীয় অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। শরীরের প্রতিদিন মোট শক্তি/ক্যালোরি প্রয়োজন ২০০০ থেকে ৩০০০ কিলোক্যালরি (kcal), তার মধ্যে প্রায় ৪৫% থেকে ৬৫% আমরা পেয়ে থাকি কার্বোহাইড্রেট থেকে। এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট শরীরে চার কিলোক্যালরি শক্তি সরবরাহ করে।
খ. প্রোটিন/আমিষ (Proteins): প্রোটিন হল শরীর গঠনকারী খাবার। এটা বৃদ্ধি ও বিকাশ, দেহের কোষ- কলাগুলোর গঠন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, বিপাকীয় ও পাচক এনজাইম ও নির্দিষ্ট হরমোনের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিড নামে পরিচিত ছোট ছোট একক দ্বারা গঠিত। সব মিলিয়ে ২২টি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে, যার মধ্যে ৮টি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে, যা আমাদের শরীর তৈরি করতে পারে না, তাই খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়। এগুলোকে ইসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড বলে। বাকি অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরের অভ্যন্তরে তৈরি হয়, যা নন- ইসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড বলে।
* * ১ গ্রাম প্রোটিন ৪ কিলোক্যালরি শক্তি দেয়।
> প্রোটিনের কাজ:
**প্রোটিনের অভাবজনিত রোগের নাম প্রোটিন এনার্জি ম্যালনিউট্রিশন, যার মধ্যে আছে কোয়াশিওরকর এবং ম্যারাসমাস। নিচের ছবিতে এদের নমুনা দেখানো হল :
> উৎসঃ
**বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ
(i) পশুর প্রোটিন, অর্থাৎ, মাংস, ডিম, দুধ, ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনগুলো উদ্ভিদ প্রোটিনে, যেমন, ডাল, সিরিয়াল ইত্যাদি থেকে ভালো, এর কারণ হল উদ্ভিদ উৎস থেকে পাওয়া প্রোটিনে সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে না।
(ii) প্রতিটি খাবারে উদ্ভিদ প্রোটিনের দুই বা ততোধিক উৎস অন্তর্ভুক্ত করলে প্রোটিনের গুণমান উন্নত হয়।
> শরীরে প্রোটিনের চাহিদা
প্রতিদিন প্রোটিন গ্রহণের প্রস্তাবিত পরিমাণ হল শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ১ গ্রাম। উদাহরণ: একজন ব্যক্তির যদি ৬০ কিলোগ্রাম হয়, তাহলে তার প্রতিদিন ৬০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হবে। এটি একটি ডিম বা একটি ডিমের আকারের এক টুকরো মাংসের সমান। শিশু, কিশোরী এবং গর্ভবর্তী এবং অন্যদানকারী মায়েদের প্রোটিনের চাহিদা নীচে দেওয়া হলঃ
**দ্রষ্টব্য: যখন শরীর তার শক্তির চাহিদা মেটাতে পর্যায় কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি পায় না, তখন এই ক্যালোরি সরবরাহ করে শরীরে জমে থাকা প্রোটিন। যখন প্রোটিন শক্তির জন্য ব্যবহৃত হয় তখন তারা তাদের নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর জন্য উপলব্ধ হয় না।
গ. লিপিড/ স্নেহ/ তেল (Lipid/fat): লিপিড নামেও পরিচিত চর্বি এবং তেল প্রাণী এবং উদ্ভিদ উত্তর উৎস থেকে প্রাপ্ত। চর্বি শক্তি জোগায়, শরীরের কোষ তৈরি করে, শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে, শরীরের ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে এবং ফ্যাট সলিউবল দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে এর শোষণ ও কাজ সহজতর করে। রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে, ফ্যাটি অ্যাসিডগুলোকে স্যাচুরেটেড এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডে ভাগ করা হয়। সাধারণত স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত লিপিডগুলো ঘরের তাপমাত্রায় শক্ত থাকে এবং এর মধ্যে আছে প্রাণীর চর্বি মোখন, ঘি) এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় তেল (পাম, নারকেল)। স্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডে ঘরের তাপমাত্রায় তরল থাকে। এর মধ্যে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা সূর্যমুখী, ভুট্টা, সয়াবিন এবং জলপাই তেলের মতো উদ্ভিজ্জ তেলে পাওয়া যায়। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
**১ গ্রাম চর্বি ১ কিলোক্যালরি শক্তি দেয়।
> স্নেহজাতীয় খাবারের কাজ:
উৎস: রান্নার তেল, ঘি, মাখন: তৈলবীজ, বাদাম: মাংস, মুরগি, মাছ, ডিম; পুরো দুধ, পনির
**বিশেষ বৈশিষ্ট্য: (i) চর্বি টেক্সচার উন্নত করে সেইসাথে শোষণ করে এবং স্থান ধরে রাখা যা খাবারকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। (ii) চর্বিগুলোর এমন বৈশিষ্ট্য আছে, যা পেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারে এবং ক্ষুদামন্দার অনুভূতি দীর্ঘায়িত করতে সহায়তা করে ।
> শরীরে লিপিডের চাহিদা: লিপিড শরীরে উচ্চ পরিমাণে শক্তি সরবরাহ করে; ১ গ্রাম চর্বি ৯ কিলোক্যালরি উৎপন্ন করে। তেল দৈনিক গ্রহণকৃত মোট কিলোক্যালরির ৩০% এর বেশি হওয়া উচিত নয়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণের পরিমাপ প্রতিদিন মোট চর্বি খাওয়ার ১০% বা তার কম হওয়া উচিত। কোলেস্টেরল গ্রহণ ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।
২) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস (Micronutrients): এগুলো শরীরে অল্প পরিমাণে প্রয়োজন এবং এর মধ্যে আছে: ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ।
ক. ভিটামিন (Vitamins): ভিটামিন হল জৈব যৌগ যা দেহে নির্দিষ্ট বিপাকীয় কার্য সম্পাদন করে। ভিটামিনের দুটি রূপ আছে:
ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা
সারণী ২: শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং তাদের উৎস
খ. খনিজ পদার্থ (Minerals): বৃদ্ধি, বিকাশ, পানির ভারসাম্য এবং স্নায়ুবিক সকল ক্রিয়াকলাপসহ শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য খনিজ প্রয়োজন।
সারণী ৩: অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থ, উৎস, কাজ এবং অভাবজনিত রোগ
গ. পানি (Water): পানি আমাদের শরীরের প্রধান উপাদান। এটি শরীরের ওজনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ গঠন করে। পানি সমস্ত কোষে উপস্থিত, সমস্ত জীবন্ত টিস্যুর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি টিস্যু এবং অঙ্গগুলোকে ঘিরে রাখা এবং ক্ষত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। পানি হজম, শোষণ এবং শরীরে পুষ্টি পরিবহনে সাহায্য করে। এটি প্রস্রাবের আকারে অবাঞ্ছিত পদার্থ নির্গত করতে সাহায্য করে এবং ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখা। আমাদের প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। আমরা পানি রূপে দুধ, ফলের রস ইত্যাদিও গ্রহণ করতে পারি। বিশেষজ্ঞগণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ২-৩ লিটার পানি পান করার উপদেশ দিয়ে থাকেন। শিশুদের তাদের শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করা উচিত।
>> পানির প্রয়োজনীয়তা:
অপুষ্টি হল এমন একটি অবস্থা যা তখন বিকশিত হয়, যখন শরীর সুস্থ টিস্যু এবং অঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সঠিক পরিমাণ পায় না। এতে অপুষ্টি, অত্যধিক পুষ্টি এবং মাইক্রোনিউটিয়েন্টের অভাবজনিত রোগ (যেমন ভিটামিন এ-এর অভাব, আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা, আয়োডিনের অভাবজনিত ব্যাধি এবং জিঙ্কের ঘাটতি) অন্তর্ভুক্ত।
> অপুষ্টি বেশিরভাগই নিম্ননিধিত শ্রেণির মানুষদের প্রভাবিত করে:
ক) ঘাটতিজনিত অপুষ্টি (Under nutrition): খাদ্যের অপর্যাপ্ত গ্রহণের ফলে বা খাদ্য রূপান্তর বা শোষণে শরীরের অক্ষমতার ফলে ঘাটতিজনিত অপুষ্টি ঘটে। এই অপুষ্টিতে প্রচুর পরিমাণে পেশীর ক্ষতি হতে পারে। । দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি গর্ভাবস্থা থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রভাবিত করে, তাদের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে এবং উচ্চতা বৃদ্ধি মন্থর হওয়ার দিকে পরিচালিত করে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অপুষ্টি (খনিজ ও ভিটামিনের অভাব) খাদ্যতালিকায় খনিজ লবণ এবং ভিটামিনের অপর্যাপ্ত গ্রহণের কারণে হয়। অপুষ্টির এই রূপটি সহজে শনাক্ত করা যায় না, যখন ক্লিনিকাল লক্ষণগুলো উপস্থিত হয় তখন বুঝা যায়। খনিজ এবং ভিটামিন খুব অল্প পরিমাণে শরীরের জন্য প্রয়োজন, তারা সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খ) অত্যধিক পুষ্টি (Over nutrition): এর মানে হল, বিভিন্ন বয়স ভেদে খাবারে পুষ্টির অত্যধিক গ্ৰহণ যা ব্যক্তির খারাপ স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী। অতিরিক্ত পুষ্টির ফলে অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা বা ভিটামিন বিষাক্ততা দেখা দেয়। অত্যধিক পুষ্টি নিম্নলিখিত কারণগুলোর মধ্যে যে কোনো কারণে হতে পারে :
ক) ঘাটতিজনিত অপুষ্টির পরিণতি
খ) অত্যধিক পুষ্টির পরিণতি
খাদ্য নিরাপত্তা (বা খাদ্য স্বাস্থ্যবিধি) একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যা খাদ্যের প্রস্তুতি এবং সংরক্ষণের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ানো রোগ প্রতিরোধ করে। খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। খাদ্য সরবরাহের নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য, উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ধরনের দেশসমূহে খাদ্যবাহিত রোগের প্রতুলতা একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে। অনুমান করা হয় যে প্রতি বছর ১.৮০মিলিয়ন মানুষ ডায়রিয়া জনিত রোগের ফলে মারা যায় এবং এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দূষিত খাবার বা পানি এর জন্য দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০০ টিরও বেশি পরিচিত রোগ খাবারের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। সঠিক খাদ্য প্রস্তুতি বেশিরভাগ খাদ্যবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র তথ্য থেকে জানা যায় যে, খাদ্য পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত খুব অল্প সংখ্যক কারণই সর্বত্র খাদ্যজনিত রোগের জন্য দায়ী। এই কারণগুলো হল:
খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতির সাথে বেশ কিছু সুবিধা জড়িত, যেমন: বর্ধিত উৎপাদনশীলতার কারণে অর্থনৈতিক লাভ, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চাপ কমানো এবং খাদ্য অপচয় কমানোর মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সুরক্ষার জন্য বিশ্ববাসীকে খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে শিক্ষিত করাতে সচেতন রয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে, ডব্লিউএইচও নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতির জন্য দশটি সুবর্ণ নিয়ম তৈরি করেছিল, যেগুলো ব্যাপকভাবে অনুবাদ এবং সংশোধন করা হয়েছিল। খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সাথে প্রায় এক বছর আলোচনার পর, ডব্লিউএইচও ২০০১ সালে নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতের পাঁচটি মূলনীতি প্রবর্তন করে, যা ২০১৫ সালে পুনরায় পরিমার্জনা করা হয়। নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতির জন্য পূর্বের প্রবর্তিত দশটি সুবর্ণ নিয়মের সমস্ত বার্তা সহজ শিরোনামের অধীনে এই নতুন পাঁচটি মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। "নিরাপদ খাদ্য, উন্নত স্বাস্থ্য" এই বছরের বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, যা ২০২২ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ এবং পন্থা বিবেচনা করার সময়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (The Food and Agriculture Organization of the United Nations-FAO) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (world health organization-WHO) বেশ কয়েকটি ল প্রচার করে:
১.৪.২ খাদ্য প্রক্রিয়াকালে খাদ্য নিরাপত্তার মূল নীতি: খাদ্য নিরাপত্তার পাঁচটি মূলনীতি হল:
মূলনীতি ১. বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি এবং নিরাপদ কাঁচামাল ব্যবহার করা
মূলনীতি ২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
মূলনীতি ৩. উপযুক্ত তাপমাত্রায় খাবার রান্না করা
মূলনীতি ৪. সঠিক তাপমাত্রায় খাবার সংরক্ষণ করা
মূলনীতি ৫. কাঁচা এবং রান্না করা খাবার আলাদা রাখা
নিম্নে এই মূলনীতিগুলো বর্ণনা করা হল।
পর্যাপ্ত পরিমাপে নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার বেঁচে থাকার এবং সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। ক্ষতিকারক জীবাণু ব্যোকটেরিয়া, ভাইরাস বা পরজীবী) বা রাসায়নিক/বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা দূষিত হলে খাদ্য রোগ সংক্রমণের বাহন হতে পারে। পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অনিরাপদ খাদ্য রোগ এবং অপুষ্টির একটি দুই চক্র তৈরি করে, বিশেষ করে শিশু, ছোট শিশু, বয়স্ক এবং অসুস্থদের প্রভাবিত করে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় অবদান রাখার পাশাপাশি, নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ জাতীয় অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং পর্যটনকেও প্রভাবিত করে, উন্নয়নকে উদ্দীপিত করে। খাদ্য বাণিজ্যের বিশ্বায়ন, ক্রমবর্ধমান বিশ্ব জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুক্ত পরিবর্তনশীল খাদ্য ব্যবস্থা খাদ্যের নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য বিশ্ব ও দেশ-পর্যায়ে অনিরাপদ খাদ্যের সাথে যুক্ত জনস্বাস্থ্যের হুমকি প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ এবং সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
খাদ্যতালিকা পরিকল্পনা হল ব্যক্তি বিশেষে সুৰম খাদ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে খাদ্য নির্ধারণ, নির্বাচন এবং প্রস্তুত করা।
১.৫.১ খাঁবার পরিকল্পনা করার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার অর্থ এই নয় যে পছন্দের খাবারগুলো ছেড়ে দিতে হবে। পছন্দের খাবারগুলোকে স্বাস্থ্যকর বিকল্পে পরিণত করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে:
১। ১৬৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট
২। ১৫৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট
৩। ১৪৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট
৪। ১৩৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট
এমনকি রান্না করার পরেও, খাবার তাপমাত্রার বিপদ অঞ্চলে চার ঘন্টার বেশি থাকা উচিত নয়। তাপমাত্রা বিপদ অঞ্চল ৪১ ডিগ্রী ফারেনহাইট এবং ১৩৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর মধ্যে পড়লে যেখানে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়।
> সারাদিনের খাবারের পরিমাণ বিবেচনা করে নিম্নলিখিত উপায়ে সুষম খাঁদ্যতালিকা তৈরি করা যায়।
১] সারাদিনের খাবারের পরিমাণের অর্ধেক ভাগ (৫০%) রঙিন শাকসবজি এবং ফলের আইটেম রাখতে হবে। দিনে অন্তত ৫ বার ফল ও শাকসবজী খাওয়া উচিত।
২| সারাদিনের খাবারের পরিমাণের এক চতুর্থাংশ (২৪%) পুরো শস্যের (যেমন- গম, বার্লি, ওটস, বাদামী চাল) আইটেম রাখতে হবে। এগুলো দিয়ে তৈরি খাবার যেমন পাস্তা, সাদা রুটি, সাদা ভাত। এ ধরনের খাবার দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ বার খাওয়া উচিত।
৩| সারাদিনের খাবারের পরিমাণের এক চতুর্থাংশ (২৪%) প্রোটিন আইটেম রাখতে হবে। মাছ, মুরগি, মটরশুটি এবং বাদাম সবই স্বাস্থ্যকর, বহুমুখী উৎস থেকে ২ থেকে ৩ বার প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে এবং দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য থেকে ১ থেকে ২ বার প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। লাল মাংস সীমিত করতে হবে এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
B] পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ তেল থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর উদ্ভিজ্জ তেল যেমন জলপাই, সয়া, হুট্টা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম বেছে নিন এবং আংশিক হাইড্রোজেনেটেড তেল এড়িয়ে চলুন, যাতে অস্বাস্থ্যকর ট্রান্স ফ্যাট থাকে। মনে রাখবেন যে কম চর্বি মানে "স্বাস্থ্যকর", কথাটা সঠিক না।
৫। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় পান করতে হবে। চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য প্রতিদিন এক থেকে দুইবার খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে হবে। প্রতিদিন একটি ছোট গ্লাসে ফলের রস পান করতে হবে।
> সারণী ৪: বিভিন্ন ধরনের পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরির পরিমাণ:
বয়স | প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পরিমাণ |
অসক্রিয় শিশু: ২-৮ বছর | ১০০০-১৪০০ |
সক্রিয় শিশু: ২-৮ বছর | ১০০০-২০০০ |
মহিলা : ৯-১৩ বছর | ১৪০০-২২০০ |
পুরুষ: ৯-১৩ বছর | ১৬০০-২৬০০ |
সক্রিয় মহিলা: ১৪-৩০ বছর | ২৪০০ |
অসক্রিয় মহিলা: ১৪-৩০ বছর | ১৮০০-২০০০ |
সক্রিয় পুরুষ: ১৪-৩০ বছর | ২৮০০-৩২০০ |
অসক্রিয় পুরুষ: ১৪-৩০ বছর | ২০০০-২৬০০ |
গর্ভবতী মহিলা | প্রচলিত প্রয়োজনীয় ক্যালরীর সাথে অতিরিক্ত ৩০০ ক্যালরী যুক্ত করতে হবে। |
দুগ্ধ সেবনকারী মহিলা (১ম ৬ মাস) | প্রচলিত প্রয়োজনীয় ক্যালরীর সাথে অতিরিক্ত ৫৫০ ক্যালরী যুক্ত করতে হবে। |
দুগ্ধ সেবনকারী মহিলা (৬ মাস পরবর্তী সময়) | প্রচলিত প্রয়োজনীয় ক্যালরীর সাথে অতিরিক্ত ৪০০ ক্যালরী যুক্ত করতে হবে। |
সক্রিয় ব্যক্তি: ৩০ বছর এবং তার বেশি | ২০০০-৩০০০ |
অসক্রিয় ব্যক্তি: ৩০ বছর এবং তার বেশি | ১৬০০-২৪০০ |
শরীরে সঠিক প্রক্রিয়ায় খাদ্যের পরিপাকের জন্য বয়স বিবেচনায় ও ব্যক্তি বিশেষে খাদ্যগ্রহণের আদর্শ অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
**বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ সহায়ক সরঞ্জাম (Assistive device): সেরিব্রাল পালসি, মাসকুলার ডিস্ট্রোফি ইত্যাদি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য, খাওয়ার সময় অবস্থানের ক্ষেত্রে একই নীতিগুলো প্রযোজ্য। তবে তাদের এই অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করার জন্য অতিরিক্ত সহায়ক সরঞ্জাম দ্বারা উপকৃত হতে পারে। চাইর ডেভেলপমেন্ট সেন্টারগুলোতে ডেভেলপমেন্টাল রোগিরা এধরনের যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে থাকেন।
পারদর্শিতার মানদণ্ড
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুইপমেন্টস ও মেশিন): খাবার পরিবেশনের সরঞ্জাম
সরঞ্জাম | টুলস | মেশিন |
|
|
|
কাজের ধারা
ধাপ ১- খাবার প্রস্তুতের আগে ভালো মতো বিশুদ্ধ পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নাও।
ধাপ ২- পূর্বে পরিকল্পিত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী রেসিপি, খাদ্য উপাদান ও সরঞ্জামাদি বের করে নাও।
ধাপ ৩- খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত সমস্ত পৃষ্ঠ/স্থান এবং সরঞ্জাম পরিষ্কার কর নাও ।
ধাপ ৪- চাল স্ট্রেইনারে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে ভালোমতো ধুয়ে হাড়িতে নিয়ে চুলায় বা রাইস কুকারে বসিয়ে দাও।
ধাপ ৫- সবজি ও ফল বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে ভালোমতো ধুয়ে নাও। নতুন কিনে আনা সবজি ও ফল পানিতে এক-তৃতিয়াংশ ভিনেগার মিশিয়ে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে ভালোমতো ধুয়ে নাও। শাক জাতীয় সবজির নষ্ট পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলে পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে তুলে ফেলতে হবে। সাবান দিয়ে সবজি ও ফল ধোয়া অস্বাস্থ্যকর।
ধাপ ৬- মাংসের অতিরিক্ত তেল/চর্বি ফেলে দিয়ে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে ভালোমতো ধুয়ে নাও।
ধাপ ৭- সবজি ও মাংস কাটার জন্য আলাদা ছুঁড়ি ও কাটিং বোর্ড বাছাই কর।
ধাপ ৮- রেসিপি অনুযায়ী সঠিক মাপে সবজি ও মাংস কেটে নাও।
ধাপ ৯- পূর্বে প্রস্তুত করে রাখা মশলা রেসিপি অনুযায়ী পরিমাপ করে রান্নার প্রক্রিয়া শুরু কর।
ধাপ ১০- উপযুক্ত পাত্রে উপযুক্ত তাপমাত্রায় রান্না কর।
ধাপ ১১- রান্না শেষে সব ময়লা-আবর্জনা ঢাকনাযুক্ত ময়লা রাখার ঝুড়িতে ফেলে দাও এবং খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত সমস্ত পৃষ্ঠ/স্থান এবং সরঞ্জাম পরিষ্কার করে রাখো।
ধাপ ১২- উপযুক্ত পাত্র বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে ভালোমতো ধুয়ে খাবার পরিবেশন কর।
ধাপ ১৩- খাওয়ার সময় বয়স অনুযায়ী ব্যক্তির আদর্শ অবস্থান নিশ্চিত কর।
ধাপ ১৪- খাওয়া শেষে উচ্ছিষ্ট অংশ ঢাকনাযুক্ত ময়লা রাখার ঝুড়িতে ফেলে দাও এবং খাওয়ার স্থান ও ব্যবহৃত সমস্ত সরঞ্জাম ডিশওয়াশার দিয়ে পরিষ্কার করে জায়গা মত রেখে দাও। নিজের হাত বিশুদ্ধ পানি ও সাবান দিয়ে ধুঁয়ে নাও।
অর্জিত দক্ষতা/ফলাফল:
প্রশিক্ষণার্থী এই কাজটি ভালোভাবে কয়কেবার অনুসরণ করে মলি প্রিপারশেন পদ্ধতি ও খাবার পরিবেশন দেখাতে পারবে।
ফলাফল বিশ্লেষণ ও মন্তব্য:
আশাকরি বাস্তব জীবনে তুমি এর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবে।
১। খাদ্য কাকে বলে?
২। পুষ্টি কাকে বলে?
৩। খাদ্য নিরাপত্তা কি?
৪। ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস কি ও কত প্রকার?
৫। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস কি ও কত প্রকার?
১। খাদ্য কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও।
২। পুষ্টি কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও ।
৩। বিভিন্ন ভিটামিনের একটি করে অভাবজনিত রোগ উল্লেখ কর।
৪। বিভিন্ন খনিজের একটি করে অভাবজনিত রোগ উল্লেখ কর।
৫। খাদ্য নিরাপত্তার মূলনীতি কয়টি ও কি কি?
৬। দুই ধরনের ভিন্ন উৎস (উদ্ভিদ ও প্রাণী) থেকে প্রোটিন মিশ্রিত করে তুমি বাড়িতে প্রস্তুত করতে পারবে এমন পাঁচটি খাবারের তালিকা কর। উদাহরণ- খিচুড়ি
৭। তুমি যে শেষ খাবারটি খেয়েছিলে তা মনে করে, নিম্নলিখিত কাজগুলো কর :
(i) তুমি যে সমস্ত খাবার খেয়েছো তার তালিকা কর।
(ii) ব্যবহৃত খাদ্য সামগ্রী (উৎস) সনাক্ত কর।
(iii) উপরের আইটেমগুলো থেকে, তাদের মধ্যে উপস্থিত ম্যাক্রো এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টসগুলো সনাক্ত কর।
৮। গত ২৪ ঘণ্টায় তুমি কি কি খেয়েছো তা চিন্তা করে নিচের ছকটি সম্পন্ন কর এবং বিবেচনা কর যে তুমি প্রতিদিন সুষম খাদ্য খাচ্ছে কি না
১। খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি?
২। ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস সম্পর্কে যা জানো লেখ।
৩। শিশু / প্রাপ্তবয়স্ক / বয়স্কদের খাদ্যগ্রহণের আদর্শ অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
৪। টিকা: সুষম খাদ্য
৫। সারাদিনের খাবারের পরিমাণ বিবেচনা করে কি উপায়ে সুষম খাদ্যতালিকা তৈরি করা যায়?
৬। পাশে একটি অসম্পূর্ণ চিত্র দেওয়া আছে। চিত্রটি সম্পন্ন কর ও লেবেলিং কর।